Tuesday, August 27, 2019

পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্সে ৩-৪ দিনের সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের জন্য কেউ কিভাবে পরিকল্পনা করবে?

পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্সে ৩-৪ দিনের সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের জন্য কেউ কিভাবে পরিকল্পনা করবে?

plan for a short trip to the Dooars 
 পাঁচদিনের উপযোগী একটি সফর পরিকল্পনা করে দিলাম। এর সঙ্গে যদি আর একদিন যোগ করা যায় তাহলে সোনায় সোহাগা। (যাতায়াত বাদে)

হাতির নামে নজরমিনার

“এক সময় সূর্যটা খুঁটিমারির জঙ্গলের ওপাশে মুখ ডোবালে স্বর্গছেঁড়া ছায়া ছায়া হয়ে গেল। এখন একরাশ পাখির চিৎকার আর মদেশিয়া কুলিকামিনদের ভাসা ভাসা গান জানান দিচ্ছিল রাত আসছে। … ছোট ছোট পায়ে চলা পথ, দুপাশে ঠাসবুনোট কোমরসমান চায়ের গাছে ফুল ফুটেছে, শেডট্রিগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়াপাখি বসে সবুজ করে দিয়েছে।”

(উত্তরাধিকার/সমরেশ মজুমদার)


অসামান্য রূপসী শরত্কালে
পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্সে ৩-৪ দিনের ভ্রমণের পরিকল্পনা
পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্সে ৩-৪ দিনের ভ্রমণের পরিকল্পনা

ডুয়ার্স ভ্রমণ গাইড, খরচ, দর্শনীয় স্থান

লাটাগুড়ি

সেই লাটাগুড়ি আর নেই। সেই আটপৌরে, ঢিলেঢালা জনপদটি এখন টানটান, স্মার্ট। থাকার অঢেল ব্যবস্থার মধ্যে এখানে এখন ফাউ হিসেবে পাবেন উত্তরের ভূমিপুত্রদের বুকভরা আতিথেয়তা। পছন্দের আস্তানা বেছে নিয়ে লাটাগুড়িকে কেন্দ্রে রেখে ডুয়ার্স ঢুঁড়ে দেখা এখন অনেক সোজা। আর সেটা বুদ্ধিমানের কাজও বটে। উত্তরের প্রকৃতি বোধহয় মায়ের আগমন ধ্বনি শুনতে পায়। শরৎকালের ডুয়ার্স অসামান্য রূপসী। নিশ্চিতভাবে অন্য সব ঋতুর চেয়ে সুন্দরী। ওপারে গাঢ় নীল রঙা আকাশ। নিচে নীল পাহাড়কে পেছনে রেখে আদিগন্তে সাদায় সাদা কাশফুল বাঁকের মুখে তন্বী পাহাড়ি নদীর চড়ায় সুখের হাওয়ায় দুলছে। দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘা বড্ড ঝলমলে এই সময়। ধ্রুপদী মাধুর্যের অপরূপ বিভঙ্গে মাত করে দিচ্ছে সে। ডাইনে বাঁয়ে চোখ জুড়ানো চায়ের সবুজ। মেয়ে কুলিরা দলে দলে চা পাতা তুলতে ব্যস্ত। খয়ের, শাল, শিমুল, অমলতাস, টুন, চিলাউন, শিশু, গামার, সেগুন, সদ্য বর্ষার জলে স্নাত হয়ে চিরসবুজের পোশাক পরেছে। জঙ্গলে জঙ্গলে তাই বাহারি সবুজের বিস্তার।


চোখ জুড়ানো চায়ের সবুজ

ট্রেন বা সড়ক যে পথেই আসুন লাটাগুড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা হয়ে যাবে। গরুমারা, চাপড়ামারি, খুনিয়া, চুকচুকি, মেদলার গহীন অরণ্য দিনে দিনে দেখে নেওয়ার জন্য লাটাগুড়ি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সংলগ্ন বন বিভাগের দপ্তর থেকে পাস নিতে হয়। ১৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে বৃহস্পতিবার বাদ দিয়ে সকাল ও বিকেলে অরণ্য সফর করানো হয়। যেদিন এলেন সেদিন হয়ত বনভ্রমণ সম্ভব হবে না, তাই আশপাশটা দেখে নিয়ে পরের দিন জঙ্গলমহলে যেতে পারেন। হাতে সময় থাকলে সেদিনই দেখে নিন জল্পেশ শিব মন্দির, দোমোহিনী, চিকনমাটি, খাগরিজান, কালামাটি কিংবা মহাকালধাম।

দ্বিতীয় দিন (গরুমারা)

গরুমারা দেখতে চলুন। লাটাগুড়ি থেকে মাত্র ১৪ কিমি। চেকপোস্ট থেকে অরণ্যপথে কিমি পাঁচেক গেলে বন বাংলো। কাঠোর এই বাংলো থেকে ইনডং নদী ও আশপাশের জঙ্গল অসাধারণ লাগে। বন বাংলোর পাশেই রাইনো পয়েন্ট, গন্ডার দেখার নজরমিনার। ৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩০০ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ আর ৩০ রকমের উভচর নিয়ে ৮০ বর্গ কিমি ব্যাপ্ত গরুমারা অভয়ারণ্য। ১৯৭৬ সালে অভয়ারণ্য ও ১৯৮০-তে জাতীয় অরণ্যের শিরোপা পেয়েছে এই বনাঞ্চল। জঙ্গলের ভেতরে আরও দেড় কিমি গভীরে যাত্রাপ্রসাদ নজরমিনার। ১৯৭১ সালে আসাম থেকে আনা এক হাতির স্মৃতিতে নজরমিনারের নাম দেওয়া হয়েছে। নিজের জীবন বিপন্ন করেও যাত্রাপ্রসাদ কিছু পর্যটকের জীবন বাঁচিয়েছিল। পাশের মূর্তি নদীর ওপারে জঙ্গল। এখান থেকে গণ্ডার, বাইসন না দেখাটাই আশ্চর্যের। কাছেই চুকচুকি নজরমিনার ও নিচে ‘সল্টলিক’। এখানে নুন চাখতে আসে নানা জানোয়ার। সামনের জলাভূমিতে শীতে ভিড় করে যাযাবর পাখিকূল। এ বনে শাল, সেগুনের সজাগ উপস্থিতি। আছে জিগা, তুন, খয়ের, শিশুর মতো আঞ্চলিক বনজের দলও। গরুমারার গা ঘেঁষা রামসাই চা-বাগান লাগোয়া কালীপুর ইকো ভিলেজ রিসর্ট। পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। কটেজের চারপাশে বিদ্যুতের বেড়া। অসাধারণ নৈসর্গ।


নজরমিনার

তৃতীয় দিন (চাপড়ামারি-ঝালং-বিন্দু) ডুয়ার্সের দর্শনীয় স্থান

ভোরে চটপট প্রস্তুত হয়ে পারমিট হাতে নিয়ে মহাকালধাম। গরুমারার দিকে না গিয়ে বাতাবাড়ি মোড় থেকে ডানদিক ধরুন। লক্ষ্য চাপড়ামারি। কিছুটা যেতেই হালকা জঙ্গল শুরু হবে। একটু বাদেই চোখে পড়বে স্বচ্ছ জলের মূর্তি নদীর গা ঘেঁষে রয়েছে দারুণ সুন্দর এক বন বাংলো। পরিবেশ ও বাংলো দেখে থাকতে ইচ্ছে হতেই পারে। মূর্তি বাংলোর অপার্থিবতা পেরিয়ে ৮ কিমি গেলে খুনিয়া মোড়। সে মোড় ছাড়াতে আবার শাল, সেগুনের নজরদারি। আরও এগিয়ে বাঁহাতি সরু রাস্তা চলে গেছে চাপড়ামারি বন বাংলো ও নজরমিনারের দিকে। জঙ্গল এখানে ঘন সবুজ। সূর্যের আলোও সেভাবে প্রবেশ করতে পারে না। বাংলোর চারদিকে বৈদ্যুতিন তারের বেড়া। বন বাংলোর পেছনের দিকে বনকর্মীদের কোয়ার্টার। ৭৮ রকমের বন্যপ্রাণী আর বিস্তর ঘাসের আয়োজন রয়েছে এই ৯৪২ বর্গকিমির অরণ্যে। প্রায় ৮০ রকম ঘাসের মধ্যে বেশ কিছু বিরল প্রজাতির। নানা অর্কিড আর চোখ ধাঁধানো পাখির সমারোহে উজ্জ্বল এই বন্যভূমি হাতিদের দারুণ পছন্দের। তাই যে-কোনও সময় হাতি চলে আসতে পারে। গরুমারা থেকে চামড়ামারি ১২ কিমি।

ডুয়ার্সের দর্শনীয় স্থান
ডুয়ার্সের দর্শনীয় স্থান

চামড়ামারি বন বাংলো

চামড়ামারিকে পেছনে রেখে এবারে চলুন আরও উত্তরে ঝালং-এর দিকে। পথে পড়বে কুমাই, গৈরিবাস। চড়াই বাড়তে বাড়তে উচ্চতম হয়েছে গৈরিবাসে। নিচে ঝালং উপত্যকা। গৈরিবাস থেকে ঝালং ৬ কিমি। সবুজের মধ্যে সর্পিল গতির জলঢাকা নদী। জলঢাকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘিরেই ঝালং জনপদ। বিশেষ অনুমতি নিয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেখে নিতে পারলে অনন্য অভিজ্ঞতার ভাগীদার হতে পারবেন। এখানকার বন উন্নয়ন নিগমের বাংলোতে না থাকাটা বোকামি। বাজার পেরিয়ে কিমি দশেক চড়াই ভাঙলে বিন্দু। গোটা পথ ধরে রয়েছে কমলালেবুর বাগান। বিন্দুতে জলঢাকা নদীর ওপরে একটা ব্যারেজ রয়েছে। ব্যারেজের পরেই ভুটানের শুরু। চলে গেছে ৬ কিমি দূরে ভুটানের তেন্ডু শহরে। ঝালং থেকে সামান্য গিয়ে রংবু নদীর সেতু পেরিয়ে যে দুটো পথ তার একটি বিন্দু গিয়েছে। অন্য পথে চলে যেতে পারেন প্যারন। প্যারনের উচ্চতা ২,৫৫০ ফুট। ঝালং থেকে ১০ কিমি। এখানে বন উন্নয়ন নিগমের বাংলো রয়েছে। বাংলোর পেছনে পাহাড়ি ঢালে শাল আর ধুপি গাছের জঙ্গল। প্যারন থেকে গোদক কিংবা তারও পরে আরও প্রত্যন্তের বোদে পর্যন্ত গিয়ে ট্রেক করে যাওয়া যেতে পারে তাংতা।

চতুর্থ দিন (চালসা-মেটেলি-সামসিং-রকি আইল্যান্ড-সুনতালেখোলা)

আজকের যাত্রা চালসার দিকে। লাটাগুড়ি থেকে ৩০ কিমি। চালসা পেরিয়েই সাপের মতো পাক খেয়ে রাস্তাটা একচোটে প্রায় কয়েকশ ফুট উঠে যাবে। অথচ, এর পরে সমতল। বাঁহাতে অভিজাত সিনক্লিয়ার্স ডুয়ার্স রিট্রিটকে রেখে আরও এগিয়ে গেলে আইভিল, চুলসা, কিলকট, ইংডংদের সঙ্গ পাবেন। ছটফটে কিশোরীর নামের মতো শোনালেও ওরা সবুজ কিছু চা-বাগান। দু’হাতেই। ছোট্ট জনপদ মেটেলির পথ বড় কাব্যময়। মেটেলি থেকে ৭ কিমি আর চালসা মোড় থেকে ১৮ কিমি দূরে সামসিং। নির্জন এক পাহাড়ি গ্রাম। নেপালি ও গোর্খাদের সংখ্যাধিক্য এখানে। সামসিং থেকে নেওড়া উপত্যকার গভীরে যাওয়া যেতে পারে। সবুজের মাঝে এখানকার বন বাংলোটি দারুণ সুন্দর। বাগানঘেরা। সামান্য দূরে পাথুরে এবড়ো-খেবড়ো পথে অ্যাডভেঞ্চার করতে করতে পৌঁছে যান রকি আইল্যান্ড। তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। সামসিং থেকে ৪ কিমি গিয়ে সুনতালেখোলা। তার আগে ছোট্ট গ্রাম ভারিয়া। খেলনার মতো ছোট্ট কাঠের ঝোলা ব্রিজে পাহাড়ি নদী পেরিয়ে ওপারে গেলে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়নি নিগমের অসাধারণ পর্যটক আবাস। চারিদেকে পাহাড়ঘেরা এ এক অদ্ভুত নির্জন জায়গা। আলাপ করার জন্য প্রকৃতি সব সময়ে হাজির। কাছাকাছি ছোটখাটো ট্রেক করার ব্যবস্থাও আছে।


স্বচ্ছ জলের টলটলে নদী

পঞ্চম দিন (জলদাপাড়া-ফুন্টসোলিং-টোটোপাড়া)

আজ চলুন জলদাপাড়া (মাদারিহাট) ও ফুন্টসোলিং ডুয়ার্সের দর্শনীয় স্থান। অরণ্যের ৭ কিমি গভীরে হলং পর্যটক আবাসটি এলিট। একদা ভি ভি আই পি-রা ভিড় জমাতেন। জ্যোতি বসুর অত্যন্ত প্রিয় ছিল একসময়। এখন বুকিং মেলে। মূল গেট পেরিয়ে সামান্য এগিয়ে ডানহাতে মিনিট চারেক হাঁটলে মাদারিহাট পর্যটক আবাস। টলটলে জলের মালঙ্গী নদীর কাঠের সেতু পেরিয়ে সামান্যই। প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, ছোট্ট চিড়িয়াখানা, অফিস, বনকর্মীদের আবাসন-সহ কাঠের বাংলো। একপাশে বর্গক্ষেত্রাকার মাঠ। মাঠের একধারে ছোট ছোট কটেজ। আশপাশে বন্য অরণ্য। এক শিং-এর গণ্ডারের জন্য খ্যাত জলদাপাড়ার গভীরে আরও অনেক প্রাণীর সঙ্গে দেখা হতে পারে। যখন-তখন উঁকি দেয় ময়ূর। পথ আটকে দাঁড়ায় ভয়াল দাঁতাল। গাছে গাছে দোল খায় বানর। পাখিরা কলতানে ভরিয়ে রাখে চারপাশ। বাংলোর হাতায় ‘হাতি পয়েন্ট’ থেকে হাতির হাওদায় চেপে বেড়িয়ে পড়া যায়। দেখা হয়ে যায় সম্বর, বুনো শুয়োর এবং নিমীলিত নেত্রের রাজকীয় গণ্ডারের সঙ্গে। মাদারিহাট থেকে আধঘন্টার দূরত্বে জয়গাঁ। দু’পাশে ঘন জঙ্গল রেখে ১০ কিমি গিয়ে তোর্সা ব্রিজ পেরোতেই হাসিমারা। তার পর আবার চা-বাগান। মাঝে মাঝে উঁকি দেয় সাদারঙা ফ্যাক্টরি, সাহেব-সাহেব বাংলো, কুলি বস্তি। ইচ্ছে করলে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়তে পারেন।


হলং বনবাংলো, জলদাপাড়া

জয়গাঁ বাসস্ট্যান্ড থেকে ২ কিমির মতো গিয়ে চিত্রবিচিত্র তোরণ পেরোলেই ভুটানের ফুন্টসোলিং। পাসপোর্টহীন, কাস্টমসের রক্তচক্ষু ছাড়া এ এক অদ্ভুত বিদেশ সফর। পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঝলমলে পোশাকের নানান ভুটানি। পুলিসরা সব নীলরঙা, বাড়িঘরের সজ্জায় বৌদ্ধিক স্থাপত্যের ছাপ। পরিবেশটাই অন্যরকম। রীতিমতো আধুনিক শহর ফুন্টসোলিং। ওয়েলকাম গ্রুপের অভিজাত ‘হোটেল ড্রুক’ ছাড়াও নানা মানের অসংখ্য হোটেল রয়েছে এখানে। রাজধানী থিম্পু বা পারো শহর যেতে এখান থেকেই যাত্রা শুরু করতে হয়। লাগোয়া জয়গাঁ (ভারত)-তেও থাকতে পারেন। ফুন্টসোলং ঢুকতেই ডানহাতে বাসস্ট্যান্ড, বাঁহাতে বাজার, পার্ক। পার্কের ঠিক মাঝখানে একটি সুন্দর প্যাগোডা। আশপাশে নানা দোকান। বাজার পেরিয়ে আরও কিছুটা গেলে তোর্সা নদী। এই সময় তেমন জল থাকার কথা নয়। রূপোলি বালি চিকচিক করবে। বাজারে না ঢুকে আরও কিছুটা এগোলে খাড়াই পথের শুরু। খারবন্দী পাহাড়কে পেঁচিয়ে রাস্তা গেছে থিম্পু। মসৃণ রাস্তা। কোথাও কোথাও সশব্দে ঝর্না নেমে এসে রাস্তা ডিঙিয়ে চলে গেছে আরও নিচে। এ পথে ৪ কিমি গেলে ১,৫০০ ফুট উচ্চতার গোয়াবাড়ি টিলা।


ফুন্টসোলিংয়ের গুম্ফা ও চোর্তেন

এখানে রয়েছে সুন্দর গুম্ফা। বুদ্ধদেবের প্রায় তিন মানুষ সমান উঁচু মূর্তিটি দারুণ সুন্দর। মন্দিরময় কারুকাজ। একটু নিচে ছোট ছোট কয়েকটি চোর্তেন। গুম্ফা লাগোয়া ছবির মতো সুন্দর রাজপ্রাসাদ। তাতে অবশ্য প্রবেশ নিষেধ। ছুটির দিন হলে নিচে নামার সময় দেখতে পাবেন ভুটানি যুবকেরা জাতীয় পোশাক পরে জাতীয় ক্রীড়া তীরন্দাজি অভ্যাস করছে। অব্যর্থ ওদের হাতের লক্ষ্য। লক্ষ্যভেদ হলে রীতিমতো নেচে নেচে গান করে স্বীকৃতি জানানো হয় তীরন্দাজকে। মাদারিহাট থেকে মাত্রই ২০ কিমি দূরে টোটোপাড়া। পৃথিবীর লুপ্তপ্রায় জনজাতির মধ্যে টোটোরাই জনসংখ্যায় সবচেয়ে কম। প্রায় হাজার দেড়েক ফুট উচ্চতার টোটোপাড়া আপনাকে বিরল অভিজ্ঞতার স্বাদ এনে দেবে সন্দেহ নেই। টোটো জনজাতির সংখ্যাবৃদ্ধিতে বদ্ধপরিকর সরকার নানা কর্মসূচী নিয়েছে। সুপারি গাছে ছাওয়া গ্রামে টোটোরা বাঁশে তৈরি খড়ের ঘরে থাকেন। ঘরগুলো মাচার ওপরে। টোটোপাড়ায় প্রচুর কমলালেবু পাওয়া যায়। বনজ আবহাওয়ার পাহাড়ি পরিবেশে একদিনের সফরে টোটোপাড়া এসে আপনার ভাল লাগবেই। মাদারিহাট থেকে ফালাকাটার দিকে ১০ কিমি গেলে খয়েরবাড়ি পর্যটন কেন্দ্র। ফালাকাটা থেকে ৫ কিমি দূরে কুঞ্জনগর ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র।

ব্যাকপ্যাক

যাওয়া– নানা ভাবে যাওয়া যেতে পারে লাটাগুড়ি। ১৩১৪৯ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরে নিউ মাল জংশনে নামুন। ভাড়া : ১এ-২,২৫৫ টাকা, ২এ-১,৩৪০ টাকা, ৩এ-৯৩৫ টাকা ও স্লিপার- ৩৪০ টাকা। সেখান থেকে চালসা হয়ে লাটাগুড়ি আসতে বাস বা ভাড়া গাড়ি মিলবে। দূরত্ব ২৫ কিমি। ১৩১৪১ তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ও ১৫৯৫৯ কামরূপ এক্সপ্রেস ধরে নিউ ময়নাগুড়ি নেমেও এখানে আসা যায়। আবার নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সড়কপথে ১.৪৫ ঘন্টায় সরাসরিও চলে আসতে পারেন।

থাকা– লাটাগুড়িতে থাকার জন্য বেশ কিছু বেসরকারি ব্যবস্থা আছে। সরকারি পর্যটক আবাসে অন্যান্য জায়গায় থাকতে যোগাযোগ করুন: পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম, কে বি ১৯, সেক্টর থ্রি, সল্ট লেক, গ্রাউন্ড ফ্লোর, কলকাতা ৭০০ ১০৬। ফোন ৭৬০৪০-৪৪৪৭৯,(০৩৩) ২২৩৫-০০৬৪ (বেলা ১০টা-বিকেল ৫টা)। ওয়েবসাইট:https://wbfdc.net/ বনবাংলোয় থাকতে লিখুন:ডি এফ ও, অরণ্য ভবন, ওল্ড কোর্ট ক্যাম্পাস, জুবিলি পার্ক, পোস্ট ও জেলা জলপাইগুড়ি, ফোন (০৩৫৬১) ২২০০১৭/২২৪৯০৭।

No comments:

Post a Comment